জাতি হিসেবে আমরা আত্মিক উন্নতির চেয়ে উদরপূর্তির প্রতি বেশি মনোযোগী এ কথা সকলেরই জানা! বিশ্ববিদ্যালয়
গুলোতে আজ জ্ঞান আত্মস্থ করা অপেক্ষা বুলি ঠোঁটস্থ করে পরীক্ষার হলে উগলানোর প্রতি শিক্ষার্থীরা বেশি
মনোযোগী। কারণ যে পদ্ম পাতার জলে তাদের একেকটা কোর্স সমাপ্ত করা হয় তাতে পড়া আত্মস্থ করতে গেলে পরীক্ষার
হলে নজরকাড়া নাম্বর পাওয়া দুরূহ! আর মাস্টারমশাইরাও শিক্ষার্থীদের কোর্সের উপর দক্ষতা যাচাই অপেক্ষা
পুস্তকে প্রাপ্ত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করার প্রতি বেশি মনোযোগী। তাদের এহেন তাড়াহুড়ো করার পেছনেও ওই একই
কারণ- উদরপূর্তি।
যত তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট নামক মূল্যবান কাগজ পাওয়া যায় উদরপূর্তির বন্দোবস্তও ততই দ্রুত করা
সম্ভব।
তা একদিকে আমরা জ্ঞান আহরণ অপেক্ষা নম্বর পেতে বেশি মনোযোগী অন্যদিকে দেশে গবেষণা হচ্ছে না বলে কপাল
চাপড়াচ্ছি । কিন্তু যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শুন্য সে জাতি ধনের ভাঁড়েও ভবানী- প্রমথ চৌধুরীর এ কথা আমরা
সকলে পড়লেও কেউই উপলব্ধি করি না, কারণ ওই যে- নম্বরটাই মুখ্য জ্ঞান নয়। অন্তরে জ্ঞান না থাকলে যে গবেষণা
করা সম্ভব নয় এ সাধারণ কথাটা আমরা সবাই যেন এড়িয়ে যাই।
এর পেছনে অনেক কারণ থাকলেও একটি মুখ্য কারণ নিয়ে আমরা কেউই চিন্তিত নই। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত
মাতৃভাষায়
পড়াশোনা করার পর বিদেশী ভাষায় উচ্চশিক্ষা অর্জন কেবল কঠিনই না বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য যে অসম্ভব তা
আমরা মানতে চাই না। অনেকে সিকিওর লাইফ নষ্ট হবে ভেবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আত্মস্থ করতে পারে না বা করার সাহস
পায় না। বিদেশি ভাষা না হয়ে যদি মাতৃভাষার উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশকে হয়তো বিশ্বের জ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করত। কারণ বিদেশী ভাষাতে পড়াশোনা করেও আমরা
বৈশ্বিক বিপ্লব আনতে সক্ষম তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। ফজলুর রহমান খান, জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু
প্রমুখ বিজ্ঞানীর কাজ উল্লেখযোগ্য।
সেখানে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করলে যে আমরা চীন জাপানের চেয়ে কোন অংশে আমরা পিছিয়ে
থাকতাম না
- এ
বিষয়ে মনে হয় সবাই একমত হবেন। অল্প সময়ের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা বুঝে পড়ার সুযোগ পেত, উপরন্ত গবেষণা খাতে
আমরা কেবল বহুলাংশে এগিয়েই যেতাম না বরং তা হতো এক মহাবিপ্লব।
মাতৃভাষাকে কেবল একুশে ফেব্রুয়ারির গণ্ডিতে আবদ্ধ না রেখে উচ্চশিক্ষা সহ সকল খাতে প্রচলন করা এখন বায়ান্নর
শহীদদের রক্তের দাবি। সে দাবি পূরণের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের পথ চলা।
-আহনাফ তাহমিদ
Founder and CEO at Katthokra